RAJ_2693
Spread the love

অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নাম ‘কথা কও’। তবে নিছক কথার কথা নয়, মনের কথা বলতেই একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করলেন ইন্দ্রাণী দত্ত। নাম indrani dutt। পিকাসোর সহযোগিতায় তারই সূচনা লগ্নে বুধ সন্ধ্যায় লেক ক্লাবের কিটি রুমে জড়ো হলেন কথাকার, সুরকার, গীতিকাররা।

মগজে ভাবনার মেঘ থেকে যাঁদের সৃষ্টিতে ঝরে পড়ে যাপনের বৃষ্টি। বিচিত্র মাধ্যমে ও মাত্রায়। আবেগে আর অনুভূতিতে। এসেছিলেন কবি সুবোধ সরকার, পদ্যকার-গীতিকার, সঙ্গীতে সিদ্ধ শ্রীজাত, সুরকার কল্যাণ সেন বরাট, সঙ্গীত গুরু অনিরুদ্ধ সিংহ, প্রাক্তন পৌর প্রতিনিধি, সঙ্গীত শিল্পী অর্চনা সেনগুপ্ত, পুরমাতা মৌসুমী দাস, সাংবাদিক কৃষ্ণকুমার দাস প্রমুখ।

উত্তর কলকাতার বনেদি বৈভবে বেড়ে ওঠা ইন্দ্রাণী, দালান-উঠোন, ছাদ-বারান্দা, কার্নিস-চিলোকোঠার আনাচকানাচ থেকে ধ্বনিত শব্দকে মাতৃ সান্নিধ্যে আশৈশব কণ্ঠে ধারণ করে সুরে সিক্ত হতে থাকা ইন্দ্রাণী বড় বেলায় সঙ্গীতেই সহাবস্থান করেছেন শিল্পীর মগ্নতায়। জানতে পারেননি কথারা, কখন তাঁর তাল, লয়ের অন্তরা সঞ্চারি বেয়ে মর্মে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হতে শুরু করেছে। জানতে পারলেন, যখন কলমে বৃষ্টি এলো। প্রেমে পড়লেন ইন্দ্রাণী। কবিতার। সেই নিভৃত মনের কথপোকথন পড়ল রসিক জন। এতদিন যা মনের মাঝে বসত করেছিল, এবার সেই অনুরণন শুনবে নিখিল বিশ্ব। আপাতত আটটি স্বরচিত কবিতা নিয়ে নির্ভেজাল যাত্রা শুরু করল indrani dutt। কলম খুলে, খাতার পাতা উল্টে আপন কবিতা আবৃত্তি করেছেন ইন্দ্রাণী স্বয়ং। শুনে মুগ্ধ কল্যাণ বললেন, ‘কবি যখন নিজের লেখা শব্দ উচ্চারণ করেন, তখন কবিতা অন্য মাত্রা পায়। আবৃত্তি শিল্পীরা হয়তো অন্য রকম বলবেন। কিন্তু তাতে প্রাণের স্পর্শটা থাকে না।’ কবি সুবোধ সরকারের শুভেচ্ছায় মিশে রইল এক অনুজ কবির প্রতি অগ্রজের আশীর্বাদ। বললেন, ‘ভালো কাজ। একজন কবির ইউটিউব চ্যানেল।

সেখানে কবি স্বয়ং কবিতা পাঠ করে, আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন এবং সেটা সুন্দর ভিসুয়ালসের মাধ্যমে আমাদের সামনে এসেছে। আমরা কবিতা যেরকম ভাবে পড়ি। পাঠ করি। মুদ্রিত বই থেকে হোক, পত্রিকা থেকে হোক, সেটা আমরা ঘরে বসে টেবিলের ধারে, জানালার ধারে বসে বা গাছ তলায় বসে আমরা পাঠ করে আসছি। এটা একরকমভাবে আমরা কবিতাকে গ্রহন করি। এটা আড়াইশো তিনশো বছরের ইতিহাস। ইংরেজ আসার পর থেকে আমরা কবিতা মুদ্রিত বা ছাপাতে শুরু করলাম। কিন্তু তার আগে চার হাজার বছর আগে, কোনও কোনও দেশে কুড়ি হাজার বছর আগে, যেমন মেসোপটেমিয়াতে কবিতা লেখা হয়েছে। ছাপার কোনও বন্দোবস্ত ছিল না। কবিরা এক গাছ তলা থেকে আর এক গাছ তলায় চলে যেতেন,

এক জনপদ থেকে আর এক জনপদে চলে যেতেন, এক নদী থেকে আর এক নদীর কিনারায় চলে যেতেন। এভাবেই কবিতা ছড়িয়ে পড়ত। যেভাবে হোমারের কবিতা, বাল্মীকির কবিতা ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে। এখনও সেভাবেই ছড়ায়। আগে পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, গাছ-পালা ছিল, এখন এসে গেছে টেকনোলজি। তার সঙ্গে শব্দ, ছবি সব যদি আপনারা একটা জায়গায় জড়ো করেন, সেই বিরাট জায়গাটার নাম ইন্টারনেট। আজ আমি, আপনারা যা দেখলাম, খুব ভালো লাগল। এইভাবেই কবিতা এখন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকদিন ধরেই পড়ছে। টেকনোলজির সাহায্যে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। ইন্দ্রাণী যেভাবে কাজ করেছেন, আমি অবশ্যই প্রশংসা করবো।

এবং এইভাবেই কবিতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। যাঁদের হয়তো কবিতা সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা নেই, হয়তো অনেকেই কবিতার প্রতি সেইভাবে মনোযোগী নন, তাঁদেরকেও যদি মনোযোগী করে নিয়ে আসতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে, ইউটিউবের মাধ্যমে, যদি কবিতা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে তাহলে খুবই আনন্দের ব্যাপার হবে।’ একইসঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে পরিজনদের নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল সূচনারও প্রশংসা করেন সুবোধ। বলেন, ‘বাড়ির মানুষদের সবসময় কাছে পাওয়া যায় না, কাছে পেতে হয়।’ ইন্দ্রাণীর কবিতার প্রতি খিদে ও আকাঙ্ক্ষাকে কুর্নিশ করে শ্রীজাত বললেন, ‘প্রকাশের ইচ্ছে, মানুষের কাছে পৌঁছানোর তাগিদ,

এটা মনেহয় যেকোনও শিল্পের গোড়ার কথা। নইলে একজন মানুষ বাড়িতে বসে লিখে চলে যেতে পারতেন। বাড়িতে বসেই গান গাইতে পারতেন। ছবি আঁকতে পারতেন। তিনি কেন চান তাঁর ছবি, গান, কবিতা আরও দশজনের কাছে পৌঁছোক। তার কারণ হয়তো তাঁর কথা, ভাবনা প্রকাশ করতে চাইছেন, সেটার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন, ইন্দ্রাণীর ক্ষেত্রে সেই যোগাযোগের ভাষা কবিতা। এবং যেটুকু স্বল্প সময়ে ওঁর কবিতা পড়বার বা তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, আমার মনে হয়েছিল ওঁর নিজস্ব ভাষা, ভাব প্রকাশের একটা অন্বেষণ আছে, যেটা আরও জরুরি যেকোনও শিল্পীর ক্ষেত্রে। কারণ নিজের পথ খুঁজে না পেলে বিপদ।

তখন অনেক পথের ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারে। ইন্দ্রাণীর হাতে সেই পথ আছে।আজকে ওঁর পাঠ শুনলাম, যেটা আমি আগে শুনিনি, সেই পাঠের মধ্যে কিন্তু আবৃত্তির সংযোজন আছে সংমিশ্রণ আছে। একজন কবির ক্ষেত্রে খুব অন্য রকমের একটা গুণ। আমার যেটা সবচাইতে ভালো লাগছে, সেটা হচ্ছ এই অনুষ্ঠানটার মধ্যে একটা ঘরোয়া ভাবে আছে। একটা অনাড়ম্বর প্রকাশের চেষ্টা আছে। এবং যেটা আছে সেটা হল সবাইকে আপন করে নেওয়া। যেটা এই সময়ে পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সবচাইতে বিরল একটা গুণ।কারণ এখন মানুষ মানুষের প্রতি এমন একটা বিভেদকামী ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যায়, কেউ কাউকে কাছে ডাকে না, কেউ কারোর ভালো চায় না। কেউ চায় না আরও একজন পাশে এসে বসুন।

সকলে একা হতে চায় এবং সকলে সেরা হতে চায়। সেটাও সম্ভব। সেইরকম একটা সময়ে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রাণীর কবিতার নতুন বাড়ি, যে বাড়িটায় গৃহ প্রবেশ করলেন তাতে সামিল হয়ে, কথা বলবার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগলো।’ শ্রীজাত পড়ে শোনালেন হত্যা প্রকাশিত ‘টাটকা কবিতা’ ‘গান’। ইন্দ্রাণীর কবিতাগুলির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন তথাগত সেনগুপ্ত। ইন্দ্রাণীর সঙ্গীত গুরু অনিরুদ্ধ সিংহ বলেন, ‘আমাদের যোগাযোগ পঁচিশ বছরের। ইন্দ্রাণীর সব থেকে বড় গুণ নিষ্ঠা এবং লেগে থাকার ক্ষমতা। এছাড়া উনি কাউকে টপকে গিয়ে আগ বাড়িয়ে আত্মপ্রচার মূলক কোনও কাজ করে না।’ কবির ভাতৃসম তরুণ সঙ্গীত শিল্পী বলেন, ‘ইউটিউব চ্যানেলটি ইন্দ্রাণীদির সন্তানের মত।

আজকে তার জন্ম হল।’ আপাতত ইন্দ্রাণী দত্তর আটটি স্বরচিত কবিতা ও স্বকণ্ঠে পাঠ দিয়ে শুরু হল ইউটিউব চ্যানেল indrani dutt। হাজির ছিলেন কবির উদ্যোগে, উৎসাহে সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী সুজিত দত্ত, দেবরাজ দত্ত, রাগিনী রায় দত্তরাও। মার্জিত ভাষণে গোটা অনুষ্ঠানটিকে শব্দ ও কথামালায় বেঁধে রাখলেন সঞ্চালক দেবযানী লাহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *