লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল কলকাতায় অনুষ্ঠিত এলসিওআই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ সমাজের পরিবর্তনশীলদের সম্মানিত করল

Spread the love

 

কলকাতা- বিশ্বের বৃহত্তম সেবামূলক ক্লাব সংস্থা লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল, যা ২০০টিরও বেশি দেশ ও ভৌগলিক অঞ্চলে বিস্তৃত, এর সদস্য সংখ্যা ১৪ লক্ষেরও বেশি। শুধু ভারতেই রয়েছে প্রায় ৮,৫০০টি লায়ন্স ক্লাব, যেগুলি সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিস্তৃত এবং যেগুলির মাধ্যমে প্রায় ২.৯ লক্ষ সদস্য সমাজসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে সফল হয়েও তাঁরা সমাজের উন্নয়নে আত্মনিবেদিত হয়েছেন। লায়ন্স ক্লাবের মূল মন্ত্র “We Serve” অর্থাৎ “আমরা সেবা করি”—এই নীতির ভিত্তিতেই তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করে চলেছেন।

ভারতে লায়ন্স সদস্যরা দৃষ্টি সুরক্ষা, ডায়াবেটিস সচেতনতা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন, পরিবেশ রক্ষা, নারী ও যুবশক্তির ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং প্রয়োজনে অন্যান্য সমাজভিত্তিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশে লায়ন্স ক্লাব পরিচালিত হয় ১৭৫টি চক্ষু হাসপাতাল, ৫০টি রক্তদান কেন্দ্র, ৫৫টি ডায়ালাইসিস ইউনিট, ২০০টিরও বেশি স্কুল ও শিশু উদ্যান। তাঁরা দৈনিক ভিত্তিতে দরিদ্রদের আহার প্রদান করেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করেছেন, টিকাকরণ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং সমাজের প্রান্তিকদের জন্য বহু রকমের সহায়তা প্রদান করেন। লায়ন্স ক্লাবের এসব প্রকল্পে প্রতি বছর ভারতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়।

 

তাঁদের মতে, সমাজকল্যাণের এই মহৎ দায়িত্বে সফলতা আনতে হলে কর্পোরেট সংস্থা, অন্যান্য সেবামূলক সংগঠন এবং সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। এই মনোভাবকে সামনে রেখে লায়ন্স কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (LCOI) প্রতি বছর এমন কিছু ব্যক্তিকে সম্মান জানায়, যাঁরা লায়ন্স সদস্য না হলেও আজীবন সমাজসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।

 

এই উদ্যোগেরই তৃতীয় বর্ষ ছিল এলসিওআই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫। এই বছরের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ১লা জুন ২০২৫, সন্ধ্যা ৬টা থেকে, আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গল, কলকাতায়।

 

এই বিশেষ সন্ধ্যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল নৃত্যশিল্পী ও সমাজকর্মী আলোকানন্দা রায়ের নৃত্যনাট্য “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য”। তাঁর প্রবর্তিত “ভালোবাসার থেরাপি” ও নৃত্য থেরাপির মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক মানুষ, বিশেষত কারাবন্দীদের পুনর্বাসনের যে কাজ তিনি করে চলেছেন, তারই একটি আবেগঘন উপস্থাপনা মঞ্চস্থ হয়। এই পরিবেশনা তুলে ধরে কিভাবে শিল্প এবং সহমর্মিতা সমাজকে বদলাতে পারে।

 

এই বছরের সম্মানপ্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন এক ঝাঁক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা। সম্মানিত হন শ্রী প্রহ্লাদ রাই আগরওয়াল (চেয়ারম্যান, রূপা), শ্রী সাজ্জন বাঁসল (চেয়ারম্যান, স্কিপার লিমিটেড), শ্রী ব্রিজমোহন বেরিওয়াল (চেয়ারম্যান, এসআরএমবি), পদ্মশ্রী শ্রী সাজ্জন ভজনকা (চেয়ারম্যান, সেঞ্চুরি প্লাইবোর্ড), শ্রী বিশেষ চণ্ডিওক (চেয়ারম্যান, গ্রান্ট থর্নটন), ড. পি. চন্দ্রশেখর (উপাচার্য, এনটিআর ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস), এবং শ্রী দীপক গোয়েল (লুমিনো ইন্ডাস্ট্রিজ)।

 

তালিকায় আরও রয়েছেন শ্রী কিরণ কারনিক (ডিরেক্টর, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া; প্রাক্তন ডিরেক্টর, ইসরো; ও প্রাক্তন সভাপতি, ন্যাসকম), শ্রী ডি. আর. মেহতা (প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সেবি), শ্রী অজয় পটেল (চেয়ারম্যান, ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি, গুজরাট), শ্রীমতী আলোকানন্দা রায় (প্রতিষ্ঠাতা, টাচ ওয়ার্ল্ড লাভ থেরাপি), শ্রীমতী মনীষা সাবু (ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইনফোসিস ফাউন্ডেশন), এবং শ্রী এম. এম. সিংহি (প্রতিষ্ঠাতা, সিংহি অ্যান্ড কো)। এছাড়াও সম্মানিত হন সেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি শ্রী কুলদীপ সিংহ এবং সংগম গ্রুপ, ভিলওয়ারার চেয়ারম্যান শ্রী রামপাল সোনি।

 

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সকল ব্যক্তিত্ব ও সংস্থার নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এলসিওআই অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ তাঁদের সম্মানিত করে। এই ধরনের উদ্যোগ কেবল অনুপ্রেরণাই নয়, আগামী প্রজন্মকে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য উদ্দীপ্ত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *